আসসালামু আলাইকুম। আশা করি সবাই ভালো আছেন। আমিও ভালো আছি।
সদ্য মুক্তি পেয়েই সাড়া জাগিয়েছে বাংলাদেশী যে ওয়েব ফিল্ম তা হলো “নেটওয়ার্কের বাইরে”। আমি আজকে আপনাদের জন্য এ ওয়েব ফিল্মের হালকা রিভিউ ও ডাউনলোড লিংক নিয়ে হাজির হয়েছি। তো চলুন শুরু করা যাক। তবে শুরুতেই বলে রাখি, কোনো ডাউনলোড লিংক কাজ না করলে অবশ্যই বিকল্প লিংক ট্রাই করে দেখবেন। কারণ এসব লিংকে ইউজার বেশি হলে লিংক ডেড হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আর ডাউনলোডের সম্পূর্ণ নিয়ম পড়ে তবেই ডাউনলোড করবেন। অযথা কমেন্ট বক্সে নেগেটিভ কমেন্ট করবেন না।Genre: Adventure, Drama, Romance Imdb Rating: 9.1/10 Director : Mizanur Rahman Aryan Cast(s) : Sariful Razz,Yash Rohan, Khairul Basar, Jonayed Bukdadi, Nazia Haque Orsha,Tasnia Farin, Nazifa Tushi,Tasnuva Tisha, Shamima Naznin,Manosh Bandapadhaya,Mahmood Sajjad,Munira Yusuf Memi |
হালকা স্পয়লার
নেটওয়ার্কের বাইরে” মিজানুর রহমান আরিয়ান’র প্রথম ফিল্ম সেই হিসেবে আগ্রহতো ছিলই তারউপর আবার এক ঝাক তারকা তবে ট্রেইলার দেখে খুব বেশি আকর্ষিত না হলেও মন্দের ভালোতো হবেই এটা ভেবে রিলিজের সাথে সাথেই দেখতে বসি। তো পুরোটা দেখার পর মন ভরে গেলো, শেষের দিকে গিয়ে চোখও একটু ভিজে গেল এবং মনে হলো আরে এরকম একটা কাজইতো দরকার ছিলো। একদম ফ্রেশ একটা কাজ যেখানে আছে হাসি, প্রেম ভালোবাসা, ইমোশন আর সবচেয়ে বড় যেটা সেটা হলো বন্ধুত্ব। মানে একটা কাজ ভালো হওয়ার ক্ষেত্রে যা যা প্রয়োজন সবকিছুই আছে এই ফিল্মে। আপনি নিঃসন্দেহে দেখতে পারেন। ফিল্ম, টেলিফিল্ম/নাটক বা কোনো কাজ ভালো লাগলে হয় কি সেটা যদি আপনার ২/৩ ঘন্টারও বেশি হয় তখন মনে হয় ইশ! আরেকটু সময় হলে কি হতো? তাইলে সেই কাজটার মধ্যে আরও কতক্ষণ থাক যেত, আরও কিছু সময় উপভোগ করতে পারতাম। “নেটওয়ার্কের বাইরে” দেখার পর আমার ঠিক এমনটাই মনে হয়েছে। গল্প অনুযায়ী সকলের পরিমিত অভিনয়, সুন্দর চিত্রনাট্য, চোখে আরাম দেয়ার মতো সিনেমাটোগ্রাফি এবং শ্রুতিমধুর বিজিএম ও গান সবকিছু মিলিয়ে অসাধারণ একটা ফিল্ম। মিজানুর রহমান আরিয়ান প্রথম ফিল্মেই নির্মানের মুন্সিয়ানা দেখিয়ে বাজিমাত করেছেন। ভালোবাসা নিবেন এবং আগামীতেও এভাবে আরও ভালো ভালো কাজ উপহার দিবেন। সদ্য ভার্সিটি লাইফ শেষ করা ৪ বন্ধু মুন্না, রাতুল, আবির ও সিফাত।আবিরের সম্প্রতি ব্রেকাপ হয়েছে যার ফলে আবিরের মন খারাপ,রাতুল শিল্পী হতে চায় কিন্তু কিছুতেই সুর খুঁজে পাচ্ছে না,মুন্নার পারিবারিক অবস্থা (আর্থিক) খুব একটা ভালো না এর উপরে মুন্নার চাকুরি ও হচ্ছে না এবং সর্বশেষে সিফাত কিছুদিন পর ই পড়তে বিদেশে চলে যাবে।তো মুন্না প্ল্যানিং করে এটাই সেরা সময় সকলে মিলে একসাথে সমুদ্র ভ্রমণের।শুরুতে বাকি সবাই যেতে রাজি না হলেও পরে সকলেই রাজি হয় আর সমুদ্র ভ্রমণের উদ্দেশ্যে কক্সবাজারের রওনা হয়। এবার আরেকটু গভীর বিশ্লেষণ করা যাক।
‘নেটওয়ার্ক’ ও ‘বন্ধুত্ব’
‘নেটওয়ার্ক’ প্রযুক্তিগত যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হয়। শব্দটিকে মানবিক আবেদনে তুলে ধরে বন্ধুত্বের অসাধারণ উপস্থাপনায় নির্মিত হয়েছে ‘চরকি’-র নতুন ওয়েব ফিল্ম ‘নেটওয়ার্কের বাইরে।’ এক সুতোয় গাঁথা ফুলের মালা যেমন বেঁধে বেঁধে থাকে তেমনি সাহিত্যের ভাষায় ‘আয় তবে বেঁধে বেঁধে থাকি’ যেন হয়ে উঠেছে এ ফিল্ম।
টোটালিটি
বন্ধুত্বের টোটাল প্রেজেন্টেশন ছিল এই ফিল্ম। বন্ধুত্বের ভেতর কি কি ঘটতে পারে তার একটা ধারাবাহিক উপস্থাপনা ছিল। মজা, সিরিয়াসনেস, পাগলামি, কান্না সব ছিল গল্পে। কোন জায়গায় কোন পজ দিলে গল্পের মোড় পরিবর্তন হবে এটা খুব ভালোভাবে মেইনটেইন করা হয়েছে। নির্মাতার সুন্দর কাজ, সবার ন্যাচারাল অভিনয় কমপ্লিট প্যাকেজ কাজে পরিণত করেছে।
গল্প
একটা ফ্রেন্ডশিপ সার্কেল নিজেদের জীবনে নানারকম পরিস্থিতির চাপে ট্রিপ দেয় মুড চেঞ্জের জন্য। সেখানে ফূর্তি, খুনসুটি স্বাভাবিকভাবে চলতে থাকে। একসময় সিরিয়াসনেস আসে ঘটনাক্রমে তারপর শেষটায় যা ঘটে দর্শকের ধারণার বাইরে থাকবে।
কেমিস্ট্রি
কেমিস্ট্রি বলতে আজও অনেকের ধারণা নায়ক-নায়িকার প্রণয় কিন্তু বন্ধুত্বে এটাকে ব্রডলি ভাবা যায়। বন্ধুর সাথে বন্ধুর কেমিস্ট্রি কিংবা এখানে তাই ঘটেছে মোটাদাগে। একজন আরেকজনকে ক্ষেপিয়ে যে মজাটা পাচ্ছে, মেয়ে দেখলেই গায়ে পড়ে কথা বলা বা খাতির জমানোর সময় অন্য বন্ধুর দুষ্টুমি আবার মন খারাপের সময় আসলে ট্রু ফ্রেন্ডশিপের পাশে থাকা এগুলো ছিল জমজমাট এ ফিল্মে। এরপর আসা যায় জুটিকেন্দ্রিক কেমিস্ট্রিতে। শরিফুল রাজ-নাজিফা তুষি, খায়রুল বাশার-অর্ষা, জুনায়েদ-তাসনিয়া ফারিণ ভিন্ন ভিন্ন জুটি ছিল। তাদের বৈশিষ্ট্য একেকরকম তাই কেমিস্ট্রিও আলাদা ছিল। কোনোটাতে মতের অমিল, কোনোটাতে বয়সের পার্থক্য, কোনোটাতে চমৎকার বোঝাপড়া এভাবে কেমিস্ট্রি গড়ে উঠেছে একদম ভিন্ন ভিন্ন স্বাদে। দেখতেও ভালো লেগেছে।
গল্পের মোড় ফিল্মে গল্পের মোড় ছিল ঠিক ঠিক জায়গাগুলোতে। টানা ফান দেখালে বোরিং চলে আসতে পারে সেটা করা হয়নি। ফানের মধ্যেও হুট করে টপিক চেঞ্জ হয়ে যাচ্ছে সিরিয়াস কথাতে কিংবা বডি ল্যাংগুয়েজে। তাসনুভা তিশার চরিত্রটি ছিল গল্পের মোড় আনার পারদ। তার আগমনের পর হুট করেই গল্পটি মোড় নিল অন্যদিকে। কে জানত শেষটা… ‘কে জানত শেষটা এমন হবে!’ এভাবে অনেক সময় বলে থাকি আমরা। যে পরিস্থিতির জন্য দর্শক প্রস্তুত থাকে না তাদের সে ধারণাকে বদলে দিয়ে নির্মাতা যদি ধাক্কা দিতে পারেন তবেই বিশেষ কিছু হওয়া সম্ভব। ‘নেটওয়ার্কের বাইরে’-র শেষটা ধাক্কা দিয়েই শেষ হয়েছে। মন স্পর্শ করার জন্য যথেষ্ট। কারিগরি ফিল্মের কারিগরি আয়োজন দারুণ। টাইম ট্রাভেল করে স্টোরি টেলিং হয়েছে। সমুদ্র যেন ডাকছে এমন ফিল হবে দর্শকের। পাখির চোখে সমুদ্র দেখার অনুভূতি। সমুদ্রের নীল পানি যেন ছুঁয়ে দেখতে ইচ্ছে হয়, ড্রোন শটগুলো সমুদ্রকে জীবন্ত করেছে । ‘চল বন্ধু চল’ গানের কথা, সুর, গায়কী চমৎকার ছিল এমনকি ‘বন্ধু নং ফূর্তি নং তপঃ’ গানটি ছিল নতুন কিছু। লোকেশন এ ফিল্মের প্রাণ, ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকও আপ টু দ্য মার্ক। বন্ধুত্বের গল্পে কাজ অনেক হয়েছে আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে। এত কাজের ভিড়ে ‘নেটওয়ার্কের বাইরে’ একটি পরিচ্ছন্ন কাজ। ‘চরকি’-র ওয়ান অফ দ্য বেস্ট হয়ে থাকবে, সাথে মিজানুর রহমান আরিয়ানেরও। মুভির স্টোরিটা খুব সাদাসিধা তাই বলে মুভি টা মোটেও সাদাসিধা নয়। কিছু কিছু মুভি দেখা শেষ হওয়ার পর ও রেশ থেকে যায় এটা ওইরকম ই মুভি।একদম শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত উপভোগ করেছি,প্রচন্ড রকমের ভাল্লাগছে আমার। স্টোরি সাদাসিধে হলে উপস্থাপন দারুণ ভাবে করছে পরিচালক,যার জন্যে অনেক ধন্যবাদ মিজানুর রহমান আরিয়ানকে। মুভির শেষের টুইস্ট সেইরকম ছিলো একদম আশা করি নাই এমনটা হবে,বেশ খানিকটা ইমোশনাল ও হয়ে গেছিলাম। অভিনয় বিভাগে মোটামুটি সকলেই অসাধারণ ছিলো,লিড রোলে অভিনয় করা খাইরুল বাসার (মুন্না),শরিফুল রাজ (আবির),ইয়াশ রোহান (রাতুল) প্রত্যেকে দারুণ ছিলো তবে জুনায়েদ (সিফাত) বাকি সকলের চেয়ে একটু পিছিয়ে ই ছিলো। তবে তাদের মাঝের কেমিস্ট্রি দারুণ ছিলো । এবাদে অন্যান্য চরিত্রে নাজিয়া হক ওরশা দারুণ ছিলো,তাসনুভা তিশা ঠিকঠাক তবে আবারো কিউট তাসনিয়া ফারিন এভারেজ লেভেলের অভিনয় করেছে। সবমিলিয়ে অভিনয় বিভাগ যথেষ্ট ভালো ছিলো বলতেই হবে। মুভির স্কিনপ্লে অস্থির লেভেলের জোস,প্রায় দেড় ঘন্টা রানটাইমের মুভি কখন শুরু হবে আর কখন শেষ হবে বুঝতেই পারবেন না।মুভির সিনেমাটোগ্রাফি ও দারুণ সুন্দর ছিলো,কালার গ্রেডিং ও ভালো ছিলো ।মুভিতে ব্যবহৃত “ও বন্ধু চল,ও বন্ধু চল,চল বন্ধু চল” গানটা দারুণ ছিলো,বারবার শুনলেও গানটা শুধু শুনতেই ইচ্ছে হবে। এছাড়া সিনেমাতে ব্যবহৃত কক্সবাজার ও সেন্টমার্টিনের লোকেশনগুলা অনেক সুন্দর ছিলো।সর্বোপরি,অসাধারণ একটা দেশীয় মুভি “নেটওয়ার্কের বাইরে”। এমন মুভি দেশে আরো বেশী বেশী তৈরি হলে সুদিন ফিরতে বেশী সময় লাগবে না।অবশ্যই অবশ্যই দেখার জন্যে রেকমেন্ড করা থাকলো।
480p
720p
1080p
আজকে এই পর্যন্তই।সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন।আল্লাহ হাফেজ।